লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মনমোহন বর্মণের বয়স এখন ৮০ ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে বেশির ভাগ মানুষই কাজকর্ম থেকে অবসর নেন। কিন্তু তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর পড়াশোনা। তাই নাতনি শিপ্রা যখন স্নাতকে (সম্মান) পড়ছেন, তিনি তখন পড়ছেন মাস্টার্সে।
রংপুরের কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্সের লিখিত পরীক্ষা শেষ করেছেন মনমোহন। ২২ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। হার না মানা এই বিদ্যার্থীর ইচ্ছা ভবিষ্যতে ইংরেজিতে পিএইচডি করার।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে হাতীবান্ধার পূর্ব বেজগ্রাম এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন মনমোহন বর্মণ (৭৮)। ব্রিটিশ শাসনামলে হাতীবান্ধা এলাকার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ’৪৭-এ দেশভাগের পর ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার পদমতি রহিমুদ্দিন হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। পরে দেশে ফিরে ১৯৬১ সালে এসএসসি পাসের পর হাতীবান্ধা এসএস উচ্চবিদ্যালয়ের সংস্কৃতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তবে ইংরেজিতে তাঁর ভালো দখল থাকায় চাকরির এক বছরের মাথায় তাঁকে ওই বিভাগের শিক্ষক করা হয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। আর ১৯৭০ সালে বিএ পাস করেন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে। এরপর বিএড কোর্স শেষ। তবে ১৯৮৪-৮৫ সেশনে এমএডে ভর্তি হলেও অনুপস্থিতির কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি। ওই সময় তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন চাকরি শেষে মাস্টার্স করবেন। ২০০০ সালে অবসরে যান তিনি। আর এ বছর রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নেন।
তাঁর ছাত্ররা অনেকেই আজ বিচারক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ নানা পেশায় আছেন। হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নাজমুল কায়েস বলেন, ‘মাধ্যমিকে স্যারের কাছেই ইংরেজি পড়ে আজ আমি কলেজে পড়াচ্ছি। স্যারের অনেক ছাত্র মাস্টার্স শেষে চাকরি করলেও স্যার উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পড়াশোনা করে যাচ্ছেন। এটি সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সারওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘উনি আমার শিক্ষক। স্কুলজীবনে মনমোহন স্যার ক্লাসে ঢুকে আমাদের বলতেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আমরা স্যারের কথায় চলেছি বলেই আজ সমাজের সেবা করতে পারছি।’ এখনো এই কলেজের ইংরেজি শিক্ষকের কেউ বাইরে থাকলে মনমোহন বর্মণকে ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
স্বাধীনতাযুদ্ধেও তাঁর বিশেষ অবদান আছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মনমোহন বর্মণ ভারতের শরণার্থী শিবিরে মুজিবনগর সরকারের আওতায় শিক্ষকতা করেছেন। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তাঁর ওই অবদানের জন্য আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি।
সংসারজীবনে মনমোহন বর্মণ পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ের বাবা। ছেলেমেয়েরা সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করছেন। তাঁর বড় ছেলের মেয়ে শিপ্রা রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষে করতে চলেছেন। অন্য নাতি-নাতনিরাও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছেন। মনমোহন বর্মণ এখন হাতীবান্ধার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন।
মনমোহন বর্মণ বলেন, ‘শিক্ষার যেমন কোনো বিকল্প নাই, তেমনি শিক্ষা গ্রহণেরও কোনো বয়স নাই। তাই ভবিষ্যতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যেই পড়ালেখা করে যেতে চাই।’ তবে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের অধীনে শরণার্থী শিবিরে শিক্ষক হিসেবে পাঠদানের স্বীকৃতি চান তিনি। মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চান মুক্তিযোদ্ধার সনদটি।
মনমোহনের বড় ছেলে ভক্তি বিকাশ বর্মণ জানান, তাঁদের বাবার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ নিয়ে তাঁরাও আনন্দিত। এটি অন্যদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।
রংপুরের কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্সের লিখিত পরীক্ষা শেষ করেছেন মনমোহন। ২২ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। হার না মানা এই বিদ্যার্থীর ইচ্ছা ভবিষ্যতে ইংরেজিতে পিএইচডি করার।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে হাতীবান্ধার পূর্ব বেজগ্রাম এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন মনমোহন বর্মণ (৭৮)। ব্রিটিশ শাসনামলে হাতীবান্ধা এলাকার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ’৪৭-এ দেশভাগের পর ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার পদমতি রহিমুদ্দিন হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। পরে দেশে ফিরে ১৯৬১ সালে এসএসসি পাসের পর হাতীবান্ধা এসএস উচ্চবিদ্যালয়ের সংস্কৃতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তবে ইংরেজিতে তাঁর ভালো দখল থাকায় চাকরির এক বছরের মাথায় তাঁকে ওই বিভাগের শিক্ষক করা হয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। আর ১৯৭০ সালে বিএ পাস করেন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে। এরপর বিএড কোর্স শেষ। তবে ১৯৮৪-৮৫ সেশনে এমএডে ভর্তি হলেও অনুপস্থিতির কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি। ওই সময় তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন চাকরি শেষে মাস্টার্স করবেন। ২০০০ সালে অবসরে যান তিনি। আর এ বছর রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নেন।
তাঁর ছাত্ররা অনেকেই আজ বিচারক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ নানা পেশায় আছেন। হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নাজমুল কায়েস বলেন, ‘মাধ্যমিকে স্যারের কাছেই ইংরেজি পড়ে আজ আমি কলেজে পড়াচ্ছি। স্যারের অনেক ছাত্র মাস্টার্স শেষে চাকরি করলেও স্যার উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পড়াশোনা করে যাচ্ছেন। এটি সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সারওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘উনি আমার শিক্ষক। স্কুলজীবনে মনমোহন স্যার ক্লাসে ঢুকে আমাদের বলতেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আমরা স্যারের কথায় চলেছি বলেই আজ সমাজের সেবা করতে পারছি।’ এখনো এই কলেজের ইংরেজি শিক্ষকের কেউ বাইরে থাকলে মনমোহন বর্মণকে ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
স্বাধীনতাযুদ্ধেও তাঁর বিশেষ অবদান আছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মনমোহন বর্মণ ভারতের শরণার্থী শিবিরে মুজিবনগর সরকারের আওতায় শিক্ষকতা করেছেন। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তাঁর ওই অবদানের জন্য আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি।
সংসারজীবনে মনমোহন বর্মণ পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ের বাবা। ছেলেমেয়েরা সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করছেন। তাঁর বড় ছেলের মেয়ে শিপ্রা রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষে করতে চলেছেন। অন্য নাতি-নাতনিরাও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছেন। মনমোহন বর্মণ এখন হাতীবান্ধার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন।
মনমোহন বর্মণ বলেন, ‘শিক্ষার যেমন কোনো বিকল্প নাই, তেমনি শিক্ষা গ্রহণেরও কোনো বয়স নাই। তাই ভবিষ্যতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যেই পড়ালেখা করে যেতে চাই।’ তবে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের অধীনে শরণার্থী শিবিরে শিক্ষক হিসেবে পাঠদানের স্বীকৃতি চান তিনি। মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চান মুক্তিযোদ্ধার সনদটি।
মনমোহনের বড় ছেলে ভক্তি বিকাশ বর্মণ জানান, তাঁদের বাবার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ নিয়ে তাঁরাও আনন্দিত। এটি অন্যদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।
0 comments:
Post a Comment